শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, রাত ৩:১৪ সময়
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ জুলাই ২০২৫, ১১:০৫ দুপুর
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি চান। তবে এও বর্ণনা করেন, ভবিষ্যতের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েল ধ্বংসের একটি প্লাটফর্ম হবে। এজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বভৌম ক্ষমতা ইসরায়েলের কাছেই থাকা উচিত। সোমবার (৭ জুলাই) তিনি এমন মন্তব্য করেন। খবর রয়টার্স [https://www.reuters.com/world/middle-east/netanyahu-says-any-future-palestinian-state-would-be-platform-destroy-israel-2025-07-08/] হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নেতানিয়াহু বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়। এই উপত্যকাটি হামাস নিয়ন্ত্রণ করে। এ থেকেই ধারণা করা যায় ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্র পেলে কী করতে পারে। ট্রাম্পকে যখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, দুটি রাষ্ট্র গঠনই সমাধান কিনা? তখন ট্রাম্প বলেন-‘আমি জানি না’, তখন তিনি প্রশ্নটি নেতানিয়াহুর দিকে ঠেলে দেন। এর জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের শাসনের জন্য সমস্ত ক্ষমতা থাকা উচিত, কিন্তু আমাদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করার মতো কোনো ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। এর অর্থ হলো সার্বভৌম ক্ষমতা—যেমন সামগ্রিক নিরাপত্তা সবসময় আমাদের হাতেই থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পর মানুষ বলছে, ফিলিস্তিনিদের একটি রাষ্ট্র আছে। আর হামাসের রাষ্ট্র হলো গাজা। কিন্তু সেখানে তারা কী করেছে। তারা সেটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলেনি, বরং তারা সেখানে গর্ত খুঁড়ে বাংকার, সন্ত্রাসী সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে। এরপর তারা আমাদের জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, পুরুষদের শিরচ্ছেদ করেছে, আমাদের কিবুতজে হামলা চালিয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যেমনটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও নাৎসিদের সময় হলোকাস্টে দেখা গিয়েছিল। তাই এখন মানুষ আর সহজে বলবে না, ‘চলো, তাদের আরেকটা রাষ্ট্র দেই। কারণ সেটি হবে ইসরায়েল ধ্বংসের একটি প্ল্যাটফর্ম।’ নেতানিয়াহু বলেন, আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের ফিলিস্তিনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করছি, তারা ইসরায়েলের ধ্বংস চায় না, বরং তারা ইসরায়েলে শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। আমাদের সার্বভৌমত্ব আমাদের নিরাপত্তা। সুতরাং এটি সবসময় আমাদের হাতে থাকা উচিত। ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণ বৃদ্ধি এবং চলমান যুদ্ধে গাজার বড় অংশ ধ্বংস করার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে। তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নেতানিয়াহুর দল লিকুদের মন্ত্রিসভা সদস্যরা গত সপ্তাহে আহ্বান জানান, জুলাইয়ের শেষ দিকে নেসেটের (ইসরায়েলি সংসদ) ছুটির আগে আগে যেন ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। বসতিস্থাপণকারী এই রাজনীতিবিদরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসায়। ট্রাম্প সম্প্রতি প্রস্তাব করেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। এর ফলে ট্রাম্প পুরো মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়েন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। জিম্মিদের মধ্যে এখনও ৫০ জন গাজায় রয়েছে। তবে এদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত আছে। হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে নৈশ্যভোজের আহ্বান জানান ট্রাম্প। পাশাপাশি কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে বৈঠক করছে ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে চেষ্টা চলছে।