Image

জাতীয়

ফিরে দেখা ২৫ জুলাই : সারা দেশে চলে গণগ্রেপ্তার

Image

অনলাইন সংস্করণ

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ২:১৯ দুপুর

5
Shares

Image

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে গণগ্রেপ্তার চলে। গত ৯ দিনে (১৭ থেকে ২৫ জুলাই) সারা দেশে কমপক্ষে ৫ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে ২ হাজার ২০৯ জন, চট্টগ্রামে ৭৩৫ জন, বরিশালে ১০২ জন, নরসিংদীতে ১৫৩ জন ও সিলেটে ১২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১২৮ মামলায় ৪৫১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজধানী ঢাকায় সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় মহানগরের বিভিন্ন থানায় ২০১টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ২৫ জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ২০৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ২৬ জুলাই)। সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৪ সালের ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় অনেক মামলা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে আরও পাঁচটি মামলায় শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শিক্ষার্থীরা কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি দমিয়ে দেওয়ার জন্য এসব মামলা দেওয়া হয়।  চলমান পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার চার ঘণ্টার জন্য খোলা ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস। গত কয়েক দিনের তুলনায় এইদিন রাজধানীতে দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ এলাকা থেকে কিছুক্ষণ পরপর যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যায়। কারফিউ শিথিল থাকা অবস্থায় লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্তের নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। শুক্রবার (২৬ জুলাই) থেকে সীমিত পরিসরে আন্তঃনগর ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা ছিল; কিন্তু জননিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নাহিদ ইসলামের নামে বক্তব্য পোস্ট করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই জানিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির সাথেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না। ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার ও ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সকল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উৎখাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। গত ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আমাদের আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায় ‘সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ’। বিবৃতিতে ৯১ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ২০৩ জনে (সূত্র: দৈনিক সমকাল, ২৬ জুলাই)। এইদিন অ্যামনেস্টি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে বিচার চাইছি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসার সকল ব্যয় এবং নিহতদের পরিবারের সকল দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নেবেন।’ ২৫ জুলাই পর্যন্ত ঢামেক মর্গ কর্তৃপক্ষ মৃতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে স্বজনদের কাছে ৮৫টি লাশ হস্তান্তরর করে। আর বাকি আটজনের লাশের পরিচয় না থাকায় ময়নাতদন্ত করে দাফনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দেওয়া হয়।  চলমান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কারফিউ শিথিলের সময়সীমা দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা করা হয়। একই সঙ্গে শুক্র ও শনিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুরে কারফিউ অব্যাহত থাকবে বলে গণমাধ্যমকে জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এদিকে কারফিউর ষষ্ঠ দিনেও বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ছিল কঠোর সেনা টহল। তবে শিথিল সময়ে অফিস-আদালত, বাজার-ঘাটে ফেরে কর্মচাঞ্চল্য। তবে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। এই দিন বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এর পাশাপাশি চলেছে নিয়মিত টহল। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় বিএনপি। এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন। এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বাংলাদেশে দমন-পীড়নের নিন্দা জানান। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে জরুরিভাবে গত সপ্তাহের বিক্ষোভ দমন, ভয়াবহ সহিংসতা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ প্রকাশ এবং সব আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রম যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম ও মানদণ্ড মেনে চলে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সৃষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি, স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ নানা কারণে উদ্বিগ্ন প্রবাসী এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্নমেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সুত্র: আরটিভি

বাংলাদেশ
আরটিভি
জাতীয়
রাজনীতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সারজিস আলম
ডিজিটাল প্রযুক্তি
শ্লীলতাহানি
আওয়ামী লীগ
সমন্বয়ক
শীর্ষ খবর
Image

আরো খবর

ImageImage