মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান শুল্ক যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে দুবাইয়ে স্বর্ণের দাম উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, যদি এই অস্থিরতা অব্যাহত থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে রেকর্ড ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার এবং দুবাইয়ে প্রতি গ্রামে ৪২০ দিরহাম ছুঁয়েছিল। তবে ছুটির দিনে কিছু মুনাফা গ্রহণের কারণে দাম কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ৩ হাজার ৩১৮.৪৭ ডলার এবং প্রতি গ্রামে ৪০০ দিরহাম। বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকলে স্বর্ণের দাম দ্রুতই আবারও প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৪৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। মার্কেট বিশ্লেষক লিন ট্রান জানান, ‘চীনের বোয়িংয়ের বিমান অর্ডার বাতিল এবং কৌশলগত অগ্রাধিকার পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদিও চীন সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি, বিশ্লেষকদের মতে এটি এক ধরনের পরোক্ষ অর্থনৈতিক প্রতিশোধ।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক আলোচনা চলছে; তবে চীন এই দাবি অস্বীকার করেছে। একইসঙ্গে চীন সতর্ক করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় যদি কোনো দেশ তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে, তবে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পেপারস্টোনের গবেষণা কৌশলবিদ আহমদ আসসিরি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১২ মাসে মন্দার সম্ভাবনা ৫২ শতাংশ। এই অনিশ্চিত পরিবেশে স্বর্ণ একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘স্বর্ণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা স্তর হলো ৩ হাজার ২৪৫ থেকে ৩ হাজার ৩০০ ডলারের মধ্যে। তবে ডলার শক্তিশালী হলে এবং মার্কিন ইক্যুইটি বাজার চাঙ্গা থাকলে স্বর্ণের দামে কিছুটা চাপ তৈরি হতে পারে।’ লিন ট্রানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির হার হ্রাস পাওয়ায় ফেডারেল রিজার্ভের সুদ হার কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে অথবা তারও আগে হার কমতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ঐতিহাসিকভাবেই স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়।’ ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। বিশ্লেষকদের মতে- যদি বাণিজ্য সংঘাত, হার কমানোর প্রত্যাশা এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকে, তবে স্বর্ণের দাম শীঘ্রই প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৪৫০ ডলারের মনস্তাত্ত্বিক স্তর অতিক্রম করতে পারে।